রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

শ্রেষ্ঠতম আবেগঘন আবেদন

মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ:
সাইয়্যেদুল ইস্তিগফারের অর্থ জানুন এবং মনের সবটুকু আবেগ দিয়ে তা পড়ুন, মানসিক তৃপ্তি আপনার মন ও মানসকে ভরে দেবে। সাইয়্যেদুল ইস্তিগফারে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দ আকর্ষণীয়। এর মর্যাদাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে উল্লেখ আছে, ‘যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইস্তিগফার পড়বে আর সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দোয়া পড়বে আর সে ভোর হওয়ার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতি হবে।’

আরবির উচ্চারণ ও বঙ্গানুবাদসহ পূর্ণ হাদিসটি উল্লেখ করা হলো। তবে সঠিক আরবি উচ্চারণের জন্য সংশ্লিষ্ট হাদিস বা অন্য কোনো দোয়ার কিতাব থেকে দেখে নেবেন। সবচেয়ে ভালো হয়, অভিজ্ঞ কোনো আলেমের কাছ থেকে সরাসরি শিখে নেওয়া।

হজরত শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার হলো আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি, ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাত্বাতু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু। আবুয়ু লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবুয়ু বিজাম্বি, ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার রব। তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছো আর আমি তোমার গোলাম (বান্দা বা দাস)। আমি আমার সাধ্যমতো তোমার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের ওপর দৃঢ়ভাবে কায়েম আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার ওপর তোমার দেওয়া অনুগ্রহের কথা স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের কথা স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কেননা তুমি ব্যতীত পাপগুলো ক্ষমা করার কেউ নেই।’ যে সন্ধ্যাবেলায় এ দোয়া পড়বে, আর এ রাতেই মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, অথবা তিনি বলেছেন, সে হবে জান্নাতি। আর যে লোক সকালে এ দোয়া পড়বে আর এ দিনেই মারা যাবে সেও তেমনি জান্নাতি হবে।’ সহিহ বোখারি : ৬৩০৬

দোয়াটিতে দয়াময় আল্লাহ ও বান্দার সম্পর্ক অত্যন্ত আবেগঘন ভাষায় পরিস্ফুট হয়েছে। আল্লাহকে নিজের রব এবং নিজেকে তার নগণ্য একজন দাস ভেবে যখন অত্যন্ত মনোনিবেশ সহকারে দোয়াটি পড়া হয় তখন নিজের মধ্যে বিশেষ একটি ভাব সৃষ্টি হয়। এজন্য হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এটিকে ‘সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার’ তথা ক্ষমাপ্রার্থনার প্রধান দোয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। প্রত্যেক মুসলমানকে অর্থসহকারে দোয়াটি মুখস্থ করা প্রয়োজন এবং অর্থের দিকে লক্ষ রেখে নিজের মধ্যে সব আবেগকে জড়ো করে সকাল-বিকেল তা পড়া উচিত।

ইস্তিগফার অর্থ ক্ষমাপ্রার্থনা করা। ইস্তিগফারের বিভিন্ন দোয়া কোরআন-হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি। নামাজ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনবার ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলা সুন্নাহ কর্র্তৃক স্বীকৃত। নামাজে প্রথম সিজদা থেকে মাথা তুলে দ্বিতীয় সিজদায় যাওয়ার আগে দুবার ‘রাব্বিগফিরলি, ইগফিরলি’ বলা সুন্নত। এভাবে বিভিন্ন সময় আমরা ইস্তিগফার করে থাকি। এসব ইস্তিগফারের প্রধান হলো সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার।

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন স্থানে ইস্তিগফারের নির্দেশ এসেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি বলেছি তোমরা নিজেদের রবের কাছে ইস্তিগফার করো বা ক্ষমা চাও। নিঃসন্দেহে তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষাবেন। সম্পদ ও সন্তানসন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন আর নদী-নালা প্রবাহিত করে দেবেন।’ সুরা নূহ : ১০-১২

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে বিশর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘ধন্য সেই ব্যক্তি, যার আমলনামায় অনেক ইস্তিগফার পাওয়া যায়।’ ইবনে মাজাহ

বেশি বেশি ইস্তিগফার দ্বারা আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এমন অভ্যাস নবী-রাসুল ও সাহাবিদের বৈশিষ্ট্য। নবী করিম (সা.) আমাদের বেশি বেশি ইস্তিগফার করার তাগিদ দিয়েছেন। এটি দুঃখ-কষ্ট ও দুশ্চিন্তা দূর করার একটি বড় মাধ্যম। ঘন ঘন ক্ষমাপ্রার্থনা করলে সন্তানদের রিজিক ও বরকত বৃদ্ধি পায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘হে লোকসব! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো এবং তওবা করো, কারণ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করি এবং প্রতিদিন ১০০ বার তার কাছে তওবা করি।’

এ ছাড়া যখনই জীবনের কোনো সাফল্য আসবে, কোনো বিষয়ে বিজয়ী হবে তখন এ সাফল্য ও বিজয়কে নিজের কৃতিত্ব মনে করে গর্ব-অহংকার না করা। জয়-পরাজয়, শক্তি-সামর্থ্য ও অন্যান্য উপায়-অবলম্বন সবই আল্লাহর দান। এজন্য কোনো গর্ব-অহংকারে মত্ত না হয়ে মহান রবের সামনে দীনতার সঙ্গে মাথা নত করে হামদ, সানা, তাসবিহ-তাহলিল ও তওবা-ইস্তিগফার করতে থাকা। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য এসে যায় এবং বিজয় লাভ হয়। আর (হে নবী) যদি তুমি দেখো মানুষ দলে দলে আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করছে। তখন তুমি তোমার রবের হামদসহকারে তার তাসবিহ পড়ো এবং তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো। অবশ্যই তিনি বড় তওবা কবুলকারী।’ সুরা নাসর

হামদ মানে মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আর তাসবিহ মানে আল্লাহকে পাকপবিত্র ও পরিচ্ছন্ন এবং দোষ-ত্রুটিমুক্ত গণ্য করা। আর ইস্তিগফার মানে আল্লাহর কাছে নিজের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION